কয়েকদিন ধরে আমার উদ্বেগ ও আশঙ্কার জায়গা থেকে এ বিষয়ে কিছু লিখব মনে করছিলাম। তাই এই লিখা।
আমার আশঙ্কা ও উদ্বেগ যে কারণে- ইদানীং দেশের উঠতি বয়সের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মোবাইল ব্যবহার করে। আর অধিকাংশ মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। ফেইসবুক, ইউটিউবে চাইলে ঢুকা যায়। ইতোমধ্যে গ্রামীণফোন বিনা পয়সায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে বলে ঘোষণা করেছে। হয়তবা সময়ের পরিক্রমায় বাণিজ্যিক পলিসির কারণে অন্য অপারেটরগুলোও আরো চমক লাগানো কোন অফার নিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে কিছু অনলাইন মিডিয়া ও ফেইসবুক পেইজে এত বেশি অশ্লীলতার ছড়াছড়ি তা কারো অজানা নয়। এসব পরিচালনাকারীরা সহজে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য অপ্রত্যাশিত নিউজ পোস্ট করে থাকে। যেখানে মডেলদের নগ্ন অর্ধনগ্ন ছবি আপলোড করা হয়ে থাকে এবং এ সংক্রান্ত ভিডিও অথবা ভিডিও লিঙ্কগুলো দেয়া হয়। যাতে সহজে সবার নজরে আসে। নিউজ জানার জন্য এসব অনলাইন মিডিয়াগুলোতে লগ ইন করলে নগ্নতার ছড়াছড়ি দেখা যায়। এমনকি ফেইসবুকের বিভিন্ন পেইজ ও আইডি গুলোতে নামে বেনামে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ইউটিউবে অশ্লীল ছবির ছড়াছড়ি ও সাংঘাতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এসব সাইটেপেইজেআইডিতে যেকেউ ঢুকতে পারে। যেভাবে আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হাতের নাগালে মোবাইল থাকার সুবাদে ঢুকে পড়ছে।
আমি ক’য়েকদিন আগে এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় গিয়ে দেখলাম তাদের তিন বছরের বাচ্চা মোবাইল নিয়ে খেলা করছে। হঠাৎ হিন্দিগানের আওয়াজ কানে ভেসে আসল। পরে দেখলাম ইউটিউব থেকেই অশ্লীল নৃত্যসহ এ গান চলছে। এখানে এ শিশুটি গান হিসেবেই শুনছে, হয়তবা নিজের অজান্তেই সেখানে ঢুকে পড়েছে। এখানে ভাববার বিষয়- একটি ছোট বাচ্ছা এখন থেকে নিজের অজান্তেই ধীরে ধীরে অশ্লীলতার সাথে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে, তার কাছে একসময় অশ্লীলতা হয়ে উঠবে অতি স্বাভাবিক ব্যাপার। আগামীর এই ভবিষ্যৎ যেমন ভাববে ঠিক সমাজটা সেই ভিত্তির উপরেই গড়ে উঠবে। আর যে সকল ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে পড়ে তারা এসব প্রযুক্তি ব্যবহার কিভাবে করছে এ বিষয়ে অভিভাবকরা কতটুকু কনসার্ন অশ্লীলতা শুধু দুনিয়ার জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ তাই নয় আল্লাহও অপছন্দ করেন, যা একজন ঈমানদারকে জাহান্নামের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলে, ধর্মীয় মূল্যবোধ বলে কিছু থাকেনা। এসব চলতে থাকলে সমাজ একসময় নোডিজমের (উলঙ্গপনা) ভয়াল করালগ্রাসে নিমজ্জিত হতে পারে। মানুষের চোখের লজ্জাশরমকে কেড়ে নেবে। পশ্চিমাদেশগুলোতে এখন যা ছড়িয়ে পড়েছে। পিতা-মেয়ে, ভাই-বোন, মা-ছেলে অশ্লীলকাজে লিপ্ত হওয়া এখন মামুলি ব্যাপার যা আমরা প্রতিনিয়ত শুনে আঁৎকে উঠি। যারা আধুনিকতার নামে সমাজে অশ্লীলতাকে ছড়িয়ে দিতে চান, অথবা এমন অভদ্রতাকে আধুনিকতা বলে জীবনযাত্রা পরিচালিত করতে চান তাদের একটা বিষয় ভাল করেই জেনে রাখা প্রয়োজন যে-অশ্লীলতা কখনো আধুনিকতা হতে পারেনা।
একসময় বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা প্রতিরোধে গার্ডিয়ানরা বাসা-বাড়িতে টিভি আনতেননা। ডিভিডিতে সিনেমা দেখতে দেয়া হত না। চুপিসারে বাড়ি থেকে গিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখত কলেজের ছেলেরা। তাও অভিযোগ আসলে বাড়ি থেকে অভিভাবকরা শাসিয়ে ছাড়তেন। এখন প্রতিটি বাড়িই সিনেমা হল। প্রতিটি হাতেই সিনেমা! তাই এসব নিয়ে এখন, আজ থেকেই আমাকে আপনাকে কিছু করতে হবে। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবেনা। সারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের উপর এত নির্যাতনের পরও মুসলমানরা ইসলাম থেকে বিচ্যুত হচ্ছেনা কেন ইসলামের অগ্রযাত্রা থেমে নেই কেন এমন গবেষণায় ইসলাম বিদ্বেষীরা খুঁজে পেল দু’টি বিষয় ।
প্রথমত তারা ইসলাম ও আল‑াহকে ভালবাসে।
দ্বিতীয়ত ইসলামের সৌন্দর্যগুলো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের আকৃষ্ট করে। তাই তারা ইসলামের অনুসারী হয়ে যায়।
উপরোক্ত বিষয় দু’টিতে ঘায়েল করা ছাড়া মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে তারা ঠেকাতে পারবে না। তাই তারা তাদের করণীয় ঠিক করল দুটি।
প্রথমত ইসলামের প্রতি ভালবাসা বা তাদের আল‑াহর প্রতি ভালবাসার জায়গাটাকে যে কোন মূল্যে নিঃশেষ করে দেয়া।
বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সমূহ যেমন-
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ চালুকরা।
লিভটুগেদার বৈধতা দেয়া।
সমকামীদের বিয়ের বৈধতা দেয়া।
ব্যাপকভিত্তিক অশ্লীল নাটকগানফিল্ম তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়াবাজারজাত করা।
পতিতাবৃত্তিকে পেশার অন্তর্ভুক্ত করা।
ব্যাপকভিত্তিক সহশিক্ষা চালু করা।
স্বল্পবসন পরনে অভ্যস্ত করে তোলা।
পর্দা সমাজ সভ্যতা এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে উপস্থাপন করা।
নানা অজুহাতে হিজাব পরা বন্ধ করা।
কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালুর নামে সকাল বেলা মসজিদ মক্তবে কুরআন শিক্ষা বন্ধ করা।
আল‑াহ রাসুলের আদেশ নিষেধ পালনে বিজ্ঞান ও আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনীহা সৃষ্টি করা।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নানা দিবস পালনের নামে গানবাজনা ও বেসামাল নৃত্য আয়োজনের মাধ্যমে অশ্লীলতার বীজ বপন করা ইত্যাদি ।
দ্বিতীয়ত ইসলামকে একটি ভয়ঙ্কর ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করা।
কার্যকরী পরিকল্পনাসমূহ
ইসলামের নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সশস্ত্র দল গঠন করা, যার অর্থায়ন তারা করে।
নানা ধরেণের অঘটন ঘটিয়ে সেগুলোর দায় স্বীকার করা ।
ইসলামের নাম নিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা ।
পরিকল্পনাকারীরা নিজেরাও অনেক অঘটন ঘটিয়ে দোষ চাপিয়ে দিবে মুসলমানদের উপর।
যেমন-৯১১ টুইন টাওয়ার হামলা।
অশ্লীলতামুক্ত সমাজ গঠনে আমার আপনার ভূমিকা কী হতে পারে
সেটিই আজকের মূল আলোচনা। যে ব্যাধি সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের হৃদয় থেকে ইসলামের ভালবাসা ও আল‑াহর ভালবাসা তুলে নেয়া যায়। হাদীসে লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। যেটি আল‑াহ তার বান্দাদের জন্য অনুমোদন করে না তা একজন মু’মিন কখনো করতে পারে না। তাই এধরণের অন্যায় কাজ থেকে আরেকজন ভাইকে দূরে না রাখা মানে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার-এর দায়িত্ব থেকে নিজে দূরে থাকা। রাসূলুল‑াহ (সা) বলেন, ‘মানুষ যখন কোন অন্যায় হতে দেখে, অতঃপর তারা তা প্রতিরোধ করে না, তখন সত্বর আল‑াহ তাদেরকে ব্যাপক গযবের দ্বারা পাকড়াও করেন’। (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা৫১৪২)
আমার এ সংক্রান্ত মতামত ১৯৯৯ সালে ৮ অক্টোবরে পাঠকের মতামত কলামে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় ছাপিয়েছিল। যখন মাত্র একটু আধটু করে মনের কথাগুলো লিখতে চেষ্টা করছিলাম। সে আজ থেকে প্রায় ১৬ বছর আগে আমার বন্ধুদের বেহাল অবস্থা দেখে “অশ‑ীল ও নগ্ন ম্যাগাজিন রোধে এগিয়ে আসুন” এই শিরোনামে। সে সময় আশঙ্কা ছিল শুধু নগ্ন ম্যাগাজিন নিয়ে আর এখন বেড়েছে আরো নতুন নতুন আশঙ্কা ও চ্যালেঞ্জ! সেদিনের লিখাটি হুবহু লিখে দিলাম-
“অশ্লীল ও নগ্ন ম্যাগাজিন রোধে এগিয়ে আসুন”
নগ্নতা আধুনিক জনজীবনে সুপরিচিত একটি বিষয়। কেউ ম্যাগাজিন উলঙ্গপনা ছড়ানো -ছিটানোর কাজে ব্যস্ত কেউ বা সমর্থক। অন্যদিকে কেউবা এগিয়ে আসে ম্যাগাজিন উলঙ্গপনা রোধে। তবে বলতে হবে উলঙ্গপনার পক্ষের লোক অতিমুষ্টিমেয়। যারা এর প্রচার করে, সমর্থন করে তারা কি ভেবে দেখেছে এর ভয়াবহ ফল কি নোংরা উলঙ্গময় পূর্ণ ম্যাগাজিনগুলো কলেজ স্কুলের ছাত্রদের হাতে সরবরাহ হচ্ছে কিনা যারা স্কুল কলেজের ছাত্র তারা পত্রিকার দোকানগুলোতে পত্রিকা ক্রয় করতে গেলে পত্রিকা আর ক্রয় করতে পারেনা, তাদের কোমল মায়ামতি চোখগুলো গিয়ে পড়ে ঐ নোংরা উলঙ্গতাপূর্ণ ম্যাগাজিনগুলোর উপর। পত্রিকা আর ক্রয় করেনা। ক্রয় করে নগ্ন ম্যাগাজিন। পড়তে থাকে তারা ঐ ম্যাগাজিনে নোংরা দেহকেন্দ্রিক অশ্লীল কাহিনী, ছাত্রসমাজের জন্য তা ধ্বংস বৈ আর কিছু নয়। যার ফলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী মাঠে ময়দানে প্রেম প্রেম খেলায় লিপ্ত হচ্ছে। ছাত্ররা অংকুরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জাতির কাক্সিক্ষত ভবিষ্যৎ। ম্যাগাজিন বিক্রেতাদের প্রতি নজর দেয়া উচিত যে, তারা যেন অপ্রাপ্ত বয়স্কদের হাতে নগ্ন ম্যাগাজিনগুলো তুলে দিতে না পারে। নগ্নতাপূর্ণ অশ্লীল ম্যাগাজিন প্রকাশনা বন্ধের পদক্ষেপ নেয়া অতি প্রয়োজন। (৮১০১৯৯৯- দৈনিক ইনকিলাব-মতামতের কলাম)।
যেকোন অবাঞ্ছিত বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা বা সমাজকে এর কু-প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে এর পক্ষে জনমত বা জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এর ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরতে হয়। সবকাজ হুকুম দিয়ে মেজাজ দেখিয়ে হয়না। যেমন আগে শিশু-কিশোরদের ভয় দেখিয়ে বেত্রাঘাত করে শিক্ষক বা পিতা-মাতা পড়াশুনা করাতেন, এটা কর, ওটা কর না আদেশ নিষেধ করতেন। বাচ্চারা অনেকটা সুবোধ বালকেরমত শুনত। এখন যুগ-জামানা অনেক পাল্টিয়েছে। একশনধর্মী ভিডিও গেইমস, ইংলিশ মুভি, কার্টুন ইত্যাদি দেখে এখন তারাই উল্টো মেজাজ দেখায়, চেঁচামেচি করে, পরিবারের সবাইকে বিষিয়ে তুলে। আর ওদের মারপিট করার পরিবর্তে যদি তারা যা করছে এর ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা হয়, তাদের চিন্তায় প্রভাব বিস্তার করা যায়; তাতেই ভাল ফল পাওয়া যাবে। কারণ সুস্থ বিশ্বাস ও চিন্তার ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয় তবেই কেবল পদচ্যুতি ঘটে। যেমন ধরুন একজন ব্যক্তিকে বলা হল ধূমপান নাজায়েজ কারণ আল‑াহ তা অপছন্দ করেন। তার পাশাপাশি এর ক্ষতিকারক দিকগুলো যদি তুলে ধরা না হয় তাহলে ধূমপায়ী ব্যক্তির উপর এসব বক্তব্যের কোন প্রভাব পড়বেনা। যদি ধূমপানের মাধ্যমে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি, পরিবেশের ক্ষতি, সামাজিক প্রভাব, আর্থিক ক্ষতি, ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণ নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা না যায়। তবে এডিকটেডদের পাশাপাশি “ক্ষতিকারক বিষয়” উৎপাদন কেন্দ্রগুলো রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে বন্ধ করার জন্য এগিয়ে আসা জরুরি। একদিকে আমরা এর ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরব অন্যদিকে “ধূমপান স্ব্যাস্থের জন্য ক্ষতিকর” লিখে সিগারেটতামাকদ্রব্য বাজারজাত বা অশ্লীল গান, সিনেমা ব‑ু-ফিল্ম দেখার সুযোগ বা অবাধ বাজারজাত এর সুযোগ করে দিব এটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া কিছুই হতে পারেনা। ব্যাপারটা ঠিক এরকম যে-একজন শিক্ষক ছাত্রদেরকে ক্লাসে উপদেশ দিচ্ছেন, “তোমরা ধূমপান করবেনা, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য বড়ই ক্ষতিকর” আবার সেই মহান শিক্ষক স্কুলের উন্মুক্ত আঙিনায় ছাত্রদের সামনে দাঁড়িয়ে ধূমপান করে থাকেন। এধরণের শিক্ষক বা অভিভাবক তার ছাত্র অথবা সন্তানের কাছে কোন নৈতিক প্রভাব বিস্তার তো দূরের কথা তাদের কাছে হাস্যরসের পাত্র হিসেবে পরিগণিত হন। তাই যারা সমাজকে শুধরাবেন তাদেরকে অবশ্য শিক্ষক বা অভিভাবক হিসেবে সন্তান বা ছাত্রদের জন্য বিশ্বাসের মিনার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। কোন চাটুকার, মিথ্যাবাদী, কথার বরখেলাপকারী বা কথা কাজের গরমিলবাজ লোকের দ্বারা হয়ত অন্য কিছু করা সম্ভব হতে পারে কিন্তু একটি সমাজের কোন মৌলিক পরিবর্তন আনা যায়না।
অভিভাবক হবেন সন্তানের বিশ্বাসের মিনার
সরকারি ভাবে সমাজ শুধরানোর কোন কাজ হবে এটা চিন্তা করা আর অরণ্যে রোদন সমান । আমাদের দেশে ইভটিজিং প্রতিরোধে সরকারি আয়োজনে র্যালি হয়, কনসার্ট হয়; সেখানে গিয়ে মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হয়ে ফিরে আসে। সরকার যা বন্ধের প্রচারণা চালায় তা নিজ আয়োজনে আরো বেশি ছড়িয়ে দেয়। এসব ব্যবস্থাপনার নামে অব্যাবস্থাপনা। যারা কর্তাব্যক্তি যারা যেমন তাদের মস্তিষ্ক থেকে ভাল কিছু হবে এটা আমরা কি করে আশা করতে পারি ব্যক্তি ও সমাজ হল দেশের পরিবর্তনের মূল কাঠামো। তাই ব্যক্তি হিসেবে আমি আপনি সন্তান, ভাই-বোন বা ছাত্রের অভিভাবক হিসেবে নিজেকে বিশ্বাসের মিনার হিসাবে তৈরি করি। বিশ্বাসআস্থার জায়গাটি তৈরি করতে হলে যেসকল বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি….
– নীতিকথা তাদের যা বলেন তা মানেন কিনা
– মিথ্যা আশ্বাস দেন কিনা
– আপনি সেই কু-অভ্যাসের সাথে জড়িত কিনা
– আপনি যা করছেন তা তাদের করতে নিষেধ করেন কিনা
– তারা আপনাকে বিশ্বস্ত অভিভাবক মনে করে কিনা
– তাদের জন্য অশ্লীল ও মাদকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পেরেছেন কিনা
অশ্লীলতা ও মাদকমুক্ত রুখতে অভিভাবকের করণীয়
আপনি অশ‑ীলতার সকল আয়োজনের প্রশ্রয় দিয়ে আপনার পরিবার বা সন্তানকে অশ‑ীলতা মুক্ত রাখবেন মনে করা নেয়াহায়ত বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। কোন রোগে কেউ আক্রান্ত হওয়ার আগে যদি প্রি-ট্রিটমেন্ট নেয়া যায় তাহলে সে রোগ আসার আগেই ব্যক্তি নিরাপদ থাকে। কিন্তু যদি কেউ বলে আগে রোগে আক্রান্ত হউক এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে; এটা হবে নির্ঘাত নিজের সাথে নিজের প্রতারণার শামিল। তাই অশ‑ীলতায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই কিছু বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারি- যেমন
-পর্দা মেনে চলতে অভ্যস্ত করে তোলা।
-সামাজিক ভাবে অশ‑ীলতা ছড়ায় বা উস্কিয়ে দিতে পারে সে সকল আয়োজন বন্ধ করা ।
-অশ‑ীলতা মানুষের মযার্দাকে ভূলুন্ঠিত করে, তা অবগত করা।
-যে সকল গান ও চ্যানেল অশ‑ীলতা ছড়ায় সেগুলোর সংযোগ বাসাঅফিসস্কুল-কলেজহলছাত্রাবাসে না দেয়া। এ ব্যাপারে ডিসলাইন অপারেটরদেরও অবিহত করা।
-পাশের ক্যাসেট বিতানে অশ‑ীল ক্যাসেট বা লাইব্রেরিতে অশ‑ীল ম্যাগাজিন বই বিক্রি যেন না হয় সে ব্যাপারে বিতানিদের অবহিত করা।
– স্বল্পবসন পরিধানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের অনাগ্রহ তৈরি করা।
-কোচিং বা প্রাইভেটের নামে দীর্ঘ সময় বাইরে থাকা বন্ধ করা, প্রয়োজনে অভিভাবকগণ সাথে যাওয়া।
-প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই সেল ফোন না দেয়া। (কারণ অনেক সময় মোবাইলে অপরিচিত পুরুষ অথবা নারীর সাথে আপনার ছেলে বা মেয়ের ভাববিনিময় হয়, পরে তা অশ‑ীলতার পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে)।
-ইন্টারনেট ভাল কাজের সহায়ক হিসেবে আস্থা এবং বিশ্বাসে লালনের শিক্ষা দেয়া।
-ফেইসবুকিং ও মোবাইলে স্পিকিং যথাসম্ভব বন্ধ করতে চেষ্টা করা (মোবাইল একান্ত প্রয়োজন ছাড়া)।
-তার সাথে আপনি যা করছেন তা যেন সে তার কল্যাণের জন্য করছেন তা বুঝতে পারে। (তার উপর প্রেসার করছেন তা যদি সে বুঝে তাহলে আবার হিতে বিপরীত হতে পারে)।
-রুটিন মাফিক চলাচলে অভ্যস্ত করে তোলা।
-অসৎ সঙ্গ পরিহার নিশ্চিত করা।
– গাইরে মুহরিম ছেলেমেয়ের সাথে মেয়েছেলের সাথে অবাধে যেন না মিশে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।
– সব সময় ভাল ও আনন্দদায়ক কাজে ব্যস্ত রাখা।
-মা, বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক তাদের পর্যাপ্ত সময় দেয়া।
-অশ‑ীলতা মহা আযাব, আল‑াহ এতে তার বান্দার উপর অসন্তুষ্ট হন তা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অবহিত করা।
– ওয়াক্ত মাফিক নামাজের ব্যাপারে অভ্যস্ত করে তোলা।
-নিয়মিত কুরআন-হাদীস অধ্যয়নে অভ্যস্ত করে তোলা।
-সবসময় পাক-সাফ থাকার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করা।
-দুনিয়ার পর পরকালের জীবনের ব্যাপারে বিশ্বাস তৈরি করা।
-আখেরাতমুখী জীবন গঠনে অভ্যস্ত করে তোলা।
-আল‑াহর আদেশ নিষেধের ব্যাপারে স্পষ্ট জ্ঞান দেয়া।
-প্রকৃত উন্নত জীবনের ধারণা দেয়া।
-রাসূল (সা), সাহাবায়ে কেরামের উন্নত জীবনধারা ও মহান ব্যক্তিদের জীবন থেকে শিক্ষা দেয়া।
যখন বুঝবেন সন্তান অশ‑ীলতায় সংক্রমিত তখন করণীয়
সাধ্যাতীত চেষ্টার পরও কিছু অঘটন ঘটে যায়। অশ‑ীলতা ও পাপাচারে আপনার আদরের সন্তান নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। আপনার স্নেহের প্রিয় সন্তান বা কলিজার টুকরাটি আপনার সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমন হয়রত নুহ (আ) তার সন্তানকে চেষ্টা করেও তাগুতের পথ থেকে ফিরাতে পারেননি। এরপরও আমাদের সবার কাজ হচ্ছে সাধ্যমত চেষ্টা করা। যাতে চেষ্টা অবহেলার কারণে কেয়ামতের দিন নিজেকে আসামির কাঠগড়াতে দাঁড়াতে না হয়। যেসকল আলামত দেখলে সহজে বুঝা যায় যে আপনার স্নেহের সন্তানটিভাইবোনটিঅশ‑ীলতার পথে বা বিপথে পা বাড়িয়েছে। যেমন-
-স্বল্পবসন বা বিবস্ত্র থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে।
-মোবাইলইন্টারনেটের অপব্যবহার করছে (পর্নোগ্রাফি দেখছে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করছে)।
-মাদক গ্রহণ করছে (ধূমপান, মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা)।
-রাত বেরাতে বিভিন্ন ক্লাব বা পার্টিতে যোগ দিচ্ছে।
-বেহায়া নর-নারী (বন্ধুবান্ধব) এর সাথে চলা ফেরা করছে।
-জুয়া খেলায় মেতে উঠেছে।
-বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি করা (যা ইসলামে নিষিদ্ধ)।
-লিভ টুগেদার করছে।
-সমকামিতায় লিপ্ত হচ্ছে।
-নিষিদ্ধ পল‑ীতে আনাগোনা করছে।
-ঘরের ভেতরে বাহিরে নির্লজ্জ (যৌন অপরাধ) আচরণ করছে।
-দ্বীন ধর্মের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করছে।
-আল‑াহর শাস্তি বা পুরস্কারকে অস্বীকার করছে (নাস্তিকতা)।
-ভোগবাদী জীবনে অভ্যস্ত হওয়া।
-অর্থের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা (যেমন পুলিশকন্যা ঐশী)।
– পরিবার ও দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতা।
-পরকীয়ায় অভ্যস্ত।
-আত্মসম্মান ও লাজ-লজ্জা বলতে কিছু না থাকা।
বিবাহ বিচ্ছেদের আসল কারণ
এভাবে আপনার চোখে এমন হয়ত অনেক অসংলগ্ন অনেক কিছু বাধে যার দরুন আপনি বুঝতে পারেন আপনার প্রিয়জন বিপথে পা বাড়াচ্ছে। আজ সমাজে এসব কারণে মারাত্মক ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে বিবাহ বিচ্ছেদ বিষয়ে একটি টিভি চ্যানেলে (সময় টিভি-সেপ্টেম্বর-২০১৪) সাংঘাতিক ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টটি অবশ্যই সাংঘাতিক যদি পরিবেশিত তথ্য সত্য হয়ে থাকে। রিপোর্টে বলা হয়েছে শুধু মাত্র ২০১৪ সালেই রাজধানীতে (ঢাকা) বিবাহ বিচ্ছেদের (রেজিস্টারে নিবন্ধিত) ঘটনা ২২ হাজার ছাড়িয়ে। অথচ কয়েক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজারের নিচে।
তাহলে কি চিন্তা করেছেন এই যদি হয় শুধু রেজিস্টারে হিসাবের সংখ্যা তাহলে হিসাবের বাইরে আরো কত সংখ্যা থাকতে পারে যার খবর ভুক্তভোগী পরিবার ছাড়া ক’জনই বা জানে
পরকীয়া ও স্বামী-স্ত্রীর অমিলকেই বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হিসেবে উলে‑খ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে বিচ্ছেদকৃত বিয়েগুলোর অধিকাংশ বিয়েই হয়েছে কোর্ট ম্যারেজ বা লাভ ম্যারেজ এবং পরিবারের অমতে। দেখুন সব ঘটনার কারণই হচ্ছে অশ‑ীলতাকে প্রশ্রয় দেয়া। যেটি বৈধ নয় সেটিকে বৈধ বলে গ্রহণ করে নেয়া।
ইদানীং এধরণের অসংখ্য পরকীয়া ঘটনা খবরের শিরোনাম হয়েছে- পরাকীয়া প্রেমের বলি স্বামী, মায়ের পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় ভাড়াটে খুনি দিয়ে নিজের সন্তান খুন, পরকীয়া প্রেমকীর্তি দেখে ফেলায় মাসুম বাচ্ছাকে খুন করে সন্তানকে খাটের নিচে পুঁতে রাখেছে মা, কাজের মেয়ের সাথে বাড়ির কর্তার অথবা বাড়ির কর্ত্রীর সাথে কাজের লোকের সাথে পরকীয়ার জের ধরে খুনাখুনি।
পরকীয়া রোধে যে সকল প্রশ্ন
এই ভয়াবহতার শেষ কোথায়
এই ভয়াবহতার বিষয়ে একটু চিন্তা করেছেন
কিভাবে একটি পরিবার সমাজকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে পারে এই দুরারোগ্য ব্যাধি
এসব বিষয়ে নিয়ে নিশ্চয় প্রতিটি ইসলামী মূল্যবোধের মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। নিশ্চয় চিন্তার ধরন এর বাইরে নয় । যা আমি নিজে চিন্তা করি। যেমন-
– কথিত লাভ ম্যারেজ বা বিয়ের পূর্বেই প্রেম ভালবাসার নামে ইসলামে নিষিদ্ধ আপদ থেকে আমরা আমাদের পরিবার সমাজকে কিভাবে রক্ষা করব
-পরকীয়া সন্ত্রাস থেকে পরিবার সমাজকে বাঁচানোর জন্য আমাদের কী কী করা দরকার
পরকীয়া রোধে যে সকল উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে
এভাবে হাওয়ার তালে একটি সমাজকে চোখের সামনে ধ্বংস হতে পারে না। আমরা যে সকল উদ্যোগ নিয়ে নিজেকেপরিবারকেসমাজকে এই ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। যেমন-
– ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, যা মানুষের বোধ ও বিশ্বাসের ভিত্তিকে মজবুত করে।
– জীবন পরিচালনায় আল‑াহর আদেশ নিষেধকেই মূলভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা।
-গায়রে মুহরিমদের সাথে পর্দা পালন নিশ্চিত করা।
– অভিভাবকদের পরিবারের মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষক হিসেবে ভূমিকা রাখা।
-স্বামী- স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও পারিবারিক দায়িত্ব বোধের বিষয়ে সচেতন করে তোলা ।
-নারী স্বাধীনতা পুরুষ স্বাধীনতার নামে সকল বাড়াবাড়ি বন্ধ করে যার যার দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা ।
যদি উলে‑খিত মারাত্মক ব্যাধির পথ ধরে সমাজ চলতে থাকলে অচিরেই সর্বপর্যায়ে মারাত্মক বেহায়াপনা ও অশান্তি সৃষ্টি হবে। পারিবারিক ব্যবস্থা সর্ম্পূণ ভেঙ্গে পড়বে। এক সময় সন্তান উৎপাদনও বন্ধ হয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মত অবস্থা হবে। পোশাকে আশাকে মানুষ মনে হলেও এ সমাজ পরিবারগুলো মনুষ্যত্ব বোধ হারাবে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়ে মানুষের সব উন্নয়ন বিবেচনা করা যায়না, যদি না ব্যক্তি বা সমাজের মনুষ্যত্ব বা বিবেকের উন্নয়ন না হয়।
ফেইসবুকের অপব্যবহার
ফেইসবুক একটি সামাজিক ব্যবস্থা যা বন্ধু এবং অন্যান্য যারা তাদের সাথে কাজ করে, লেখাপড়া করে এবং এক সাথে বাস করে তাদের সাথে যুক্ত করে। বন্ধুদের সাথে থাকা, অসংখ্য ছবি, ভিডিও কিংবা প্রকাশনা এবং যাদের সাথে দেখা হয় তাদের সম্পর্কে আরো জানার জন্য মানুষ ফেইসবুক ব্যবহার করে। দেখুন এই ফেসবুক যদি কল্যাণের তরে ব্যবহার না করলে কত মারাত্মক ধরণের অঘটন ঘটতে পারে। দুটি ঘটনা উলে‑খ করছি ইউটিউবে সার্চ করলে পাওয়া যাবে। যদিও বা সে ঘটনার আদলে ইউটিউবে অভিনয় করা হয়েছে। কিন্তু সমাজের ভেতর বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও ভয়াবহ।
ঘটনা এক
যুবকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ হবে। আর মেয়ের বয়স ২০ থেকে ২২। ফেইসবুকে ফেইক আইডি খুলে চ্যাটিং শুরু। এক অজানা মানুষের সাথে। এক দিন দু’দিন করে কিছু দিন এভাবে চলছিল। ঘরে মা-বাবা সন্তানদের আধুনিক ও যুৎসই ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে তাদের জন্য সকল চাহিদা পূরণে সচেষ্ট। তেমনি তাদের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, দামি মোবাইল কিনে দেয়া হয়েছিল, মা-বাবার চোখের আড়ালে ওরা মনের মাধুরী মিশিয়ে সেগুলোর অপব্যবহার করছে। লুকোচুরির ভেতরেই ভাবের আদান প্রদান হলো, এক অপরের মনের স্বপ্নের মানুষে রূপ নিতে এক পর্যায়ে দিনক্ষণ নির্ধারণ হল ডেটিং এর। একটি রেস্টুরেন্টে। মেয়েটি আগে ভাগে এসে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, অপেক্ষার শেষ সময়ের প্রতিটি মিনিট এক একটি ঘন্টা। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো। স্বপ্নের মানুষটি এসে সামনে দাঁড়ালো। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো তার ভাই তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ছেলেটির সামনে বসে রয়েছে তার প্রিয় আদরের বোনটি! রাগে লজ্জায় পরস্পর লাল হয়ে গেল। কে কাকে দুষবে ঠিক তারা বুঝতে পারছিল না।
ঘটনা দুই এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আর বয়স লুকানো ৫০ ঊর্ধ্ব পুরুষ ফেইসবুক ফেইক আইডিতে চ্যাটিং-এ জড়িয়ে পড়ে। হ্যায়, হ্যালো, খোঁজ-খবর। একসময় ভালবাসার কথা। প্রেমের ভাব বিনিময়। এরপর ডেটিং। মেয়েটি অপেক্ষার পালা শেষে সামনে এসে দাঁড়ালো তার স্বপ্নের পুরুষ! সে যে তার বাবা। লজ্জায় কার মুখ কোথায় লুকায়
এ সকল নির্লজ্জদের কিসের লাজ-লজ্জা এমন নাম ঠিকানা না জানা কত বিবেক (!) কথিত প্রেম-পীড়িতির ফাঁদে পড়ে নিজের সতীত্ব নষ্ট করে সমাজ-সভ্যতায় চিড় ধরিয়ে চলছে তার ইয়ত্তা নেই। এভাবে কত-শত ঘটনা আমাদের সমাজে ঘটে চলছে তা হিসাব রেখেও পরিত্রাণের কোন সুযোগও নেই। যদি না তাদের বোধ ও বিবেককে জাগ্রত করা না যায়। প্রতিটি সুযোগ মানুষের জন্য একটি আল‑াহর নেয়ামত। এর সুষ্ঠু ব্যবহারের করে মানুষ উপকৃত হয়। আর এর অপব্যবহারে সমাজ সভ্যতা ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে উপনীত হয়। যেমন প্রযুক্তির সুযোগ। অফিস-আদালতে, বাসা-বাড়িতে, রাস্তা-ঘাটে, মাঠে-হাটে সর্বত্র প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতে এখন মোবাইল দেখতে পাওয়া যায়। এটি প্রযুক্তির উন্নতি। হয়ত সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগও পাওয়া যাবে। আর এ সুযোগকে কিভাবে ব্যবহার করছি এটিই বিবেকের কাছে প্রশ্ন হওয়া উচিত। এটির সুষ্ঠু ব্যবহারে যেমন আমরা উন্নতির শিখরে উঠতে পারি আবার এর অপব্যবহার করে অবনতির শিখরে ও পৌছাতে পারি।
মোবাইল ফোনের অপব্যবহার
মোবাইলে অপরিচিত জনের সাথে আলাপ, পরিচয়, দেখা-শুনা। এরপর প্রেম অথবা পরকীয়া। এসব ঘটনা আজকাল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হলেও এটি যে গুনাহের কাজ, অপরাধ। সে চেতনা শিক্ষায় আমরা আমাদের মাঝে তৈরি করতে পারিনি। এ ব্যর্থতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের।
সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনার মাঝে একটি আলোচিত ঘটনা সবাইকে মর্মাহত করেছে। হয়তবা এর চেয়ে ও লোমহর্ষক আরো কত ঘটনা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংঘটিত হয়ে চলছে যার খবর কয়জনেইবা রাখে
সংঘটিত ঘটনা
রাজধানীর ডেমরার বাহির টেংরা এলাকার গৃহবধূ মরিয়মের মোবাইল ফোনে একটি মিসকল। ওই নম্বরে কল করতেই রিসিভ করেন আজিজুল হক নামে এক ব্যক্তি। কথায় কথায় দুজনের সম্পর্ক গড়ায় পরকীয়ায়। স্বামী-সন্তান আর এলাকাবাসীর চোখ এড়িয়ে দেখা করতেন ডেমরায় নতুন ভাড়া নেয়া একটি ফ্ল্যাটে। সেখানে ৬ মাস ধরে নিয়মিত দুজনের মেলামেশা হতো। কিন্তু গত রোজার মাসে বিষয়টি টের পেয়ে যান মরিয়মের ছেলে ও ডেমরার পাথর ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান। এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। কিন্তু ঘটনা বাকবিতণ্ডায় থেমে থাকেনি। মরিয়ম তার সন্তানকেই হত্যার পরিকল্পনা করে প্রেমিক আজিজুলকে সঙ্গে নিয়ে। নাটকের কাহিনীর মতো সন্তানকে হত্যা করে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন পুত্রবধূ নূরজাহানকে। মায়ের ইচ্ছায় শ্বাসরোধ করে ছেলেকে হত্যার এমন মর্মান্তিক ও অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছে গত ১২ আগস্ট ২০১৪ রাজধানীর ডেমরায়। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে মা ও তার প্রেমিক এবং দুই সহযোগী।
এক পর্যায়ে মরিয়ম ছেলেকে পরকীয়ায় পথের কাঁটা ভেবে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছেলে মারার দায়িত্ব দেন প্রেমিক আজিজুল হককে। নিজেই খরচ বহনের কথাও জানান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় মরিয়ম বেগম তার ছেলে কামরুজ্জামানকে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলেন। বিষয়টি জানার পর কামরুজ্জামান তাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য রাজধানী খিলগাঁওয়ের খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে গিয়ে মরিয়ম প্রেমিক আজিজুল হককে মোবাইলে কামরুজ্জামানের হাসপাতালের সামনে অপেক্ষার খবর জানিয়ে দেন। কামরুজ্জামানকে আগে থেকেই চিনত আজিজুল। এরপরও তার হাতে ছেলের ছবি দিয়ে রাখে মরিয়ম; যাতে ভুল না হয়। তবে আজিজুলকে চিনত না কামরুজ্জামান। হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ পাথর ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানকে দেখে বেশ কয়েক ট্রাক পাথর কেনার বিষয়ে কথা বলেন আজিজুল। হাসপাতালের পাশে পার্কিং করা আজিজের মাইক্রোবাসে বসে কথা বলেন তারা। কথা বলার সময় কামরুজ্জামানকে নিজের গাড়িতে থাকা কফি খাওয়ানোর আব্দার করেন আজিজুল। কফি পান করে কামরুজ্জামান গাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায় আজিজের দুই সহযোগী তাফাজ্জাল ও মঞ্জুরুল হক সিটবেল্ট দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কামরুজ্জামানকে।
(সূত্র দৈনিক যুগান্তর ৪ অক্টোবর ২০১৪)।
অশ‑ীলতা ও অনৈতিকার পরিণতি
– অসামাজিক, অনৈতিক প্রেম-পরকীয়া সাময়িক ভাবে যতই মধুর হোক না কেন, ফলাফল তার ধ্বংস।
– আভিজাত্যের মিছে বাহাদুরি, লোভ-লালসা, যৌতুক মানুষকে ধ্বংসের চূড়ায় পৌঁছানোর আগে ছাড়ে না।
– ভারতীয় টিভি সিরিয়াল আর প্রাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতি গিলে খেলে বদ-হজম হবেই।
– ধর্মকে তোয়াক্কা না করে পালিয়ে অনৈতিক বিয়ে, জীবন থেকে সুখ-শান্তি উধাও হয়ে যায়।
– আল‑াহর বিধানে আস্থা-বিশ্বাস ও আমল না থাকার কারণে যে কোন অপরাধ করতে কোন বিবেক বোধ থাকেনা।
– পুরুষ হয়ে পুরুষত্ব ও নারী হয়ে নারীত্ব বজায় রাখেন না, তাদের সংসার অশান্তি ও মনোমালিন্য লেগেই থাকে ।
-সামাজিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
-আল‑াহর গোলামি থেকে মানুষ দূরে সরে যায়।
-আল‑াহর অকৃতজ্ঞ বান্দা ও জাহান্নামের জন্য নিজেকে প্রস্তুতি তৈরি করে।
ভাল সন্তান তৈরি করতে পিতা-মাতার ভূমিকা
একটি সন্তানের জন্য তার পিতা-মাতা সবচেয়ে কাছের মানুষ। তার সুখে দুঃখে তারাই সব। সেই সন্তানের পিতা-মাতা ও তার কাছের পরিজনরা তাকে লালন করে বড় করতে সময় দিতে হয়। সন্তানকে লালন করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা একজন মায়ের। তাই আল‑াহ মাকে তার মর্যাদা দিয়েছেন। বলা হয়েছে-“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত”। এক্ষেত্রে কোন কারণে পিতা-মাতা উভয়ের নিরবচ্ছিন্ন সাহচর্য না পেলেও অন্তত মা অথবা বাবা বড় হওয়ার সময়ে শিশুর পাশে থাকা অতীব জরুরি। অনেক সময় দেখা যায় পরিবারের অন্য সদস্যরাও (দাদা, দাদী, নানা, নানী, ফুফু, খালা ইত্যাদি) কাছে থাকেনা। তখন স্বাভাবিক ভাবে তাকে কারো কাছে লালন পালনের দায়িত্ব দিতে হয়। কে লালন করবে একটি নিষ্পাপ অবুঝ শিশুকে যান্ত্রিক এ জীবনে দুনিয়ার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রয়োজন না থাকলেও অনেক সময় পিতা-মাতা উভয়ে বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। তখন একটি শিশুকে কোন কাজের ঝি-চাকরের কাছে তাকে লালন পালন করার দায়িত্ব দিতে হয়। সারা দিনের কাজের শেষে মা-বাবা পরিশ্রান্ত অবস্থায় যখন ঘরে আসে তখন আদরের সন্তান থাকে ঘুমের ঘোরে। আবার সকালে যখন কাজে বের হওয়ার সময় হয় তখন দেখা যায় শিশুটি ঘুমন্ত। তার মানে যে সময়টি বাচ্চাটি খেলা-ধুলা করে, দৌড়-ঝাঁপ করে তখন সে তার মা-বাবাকে কাছে পাচ্ছেনা। শিশিুটির মা-বাবার চেয়েও কাছের মানুষ সেই কাজের ঝি-চাকর। তাহলে বুঝতেই পারছেন-একজন কাজের ঝি-চাকর যা জানে, যা বুঝে তার আচার আচরণ থেকে শিশু সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় এবং সে তাই শিখে যা কাজের লোক বলে করে। একটি শিশুর বোধ ও বিশ্বাসকে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য এই শিশু কালটাই তার সবচেয়ে মোক্ষম সময়।
তাই কষ্ট হলেও নিজের সন্তানকে যথার্থ মানুষের মত মানুষ করতে নিজেদের সময় বের করতে হবে। শরীরের কোথাও পচন ধরার আগে যদি তা থেকে বাঁচার জন্য কোন চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ থাকে তাহলে পচন ধরার পরে চিকিৎসা নেয়া নিঃসন্দেহে বোকামি ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তাই সন্তান খারাপ বা অসৎ হয়ে যাওয়ার আগেই সন্তানের যত্ন নিতে হবে। তাকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ সন্তান বিপথে পা বাড়ালে তার জন্য অভিভাবককে আল‑াহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
আমাদের মৌলিক করণীয়
আগেই লিখেছি ব্যক্তি ও সমাজ গঠনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হলেও নানা ধরণের বাতুলতায় রাষ্ট্র যখন নিজেই জড়িয়ে পড়ে তখন রাষ্ট্র তার নাগরিকদের জন্য প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করবে এ আশা গুড়েবালি। তাই এমন একটি স্পর্শ কাতর কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে ভূমিকা পালন করতে হবে বলে আমি মনে করি। যেমন
-ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। (হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে জানা)।
-সমাজে পর্দা প্রথা চালু করা।
-বিবাহবহির্ভূত সকল সম্পর্ক বন্ধ করা।
-অশ‑ীলতা বা পাপ কাজের সাথে জড়িতদের আল‑াহর বিধান অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করা।
-নারী-পুরুষের জন্য আলাদা কর্মক্ষেত্র তৈরি করা।
-সহশিক্ষা বন্ধ করা।
-আল‑াহর প্রতি ভালবাসা, আস্থা বিশ্বাস ও ভয় সৃষ্টি করা।
-ক্ষণস্থায়ী জীবনের বিপরীতে দীর্ঘস্থায়ী জীবনের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা।
– সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করা।
-সুস্থ ধারার সাংস্কৃতি বিনির্মাণ নিশ্চিত করা।
-তথ্য প্রযুক্তিকে দাওয়াতি কাজ ও কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যম হিসাবে ব্যাবহার করা।
-সমাজে ঘটমান সকল অপরাধগুলো চিহ্নিত করে তা ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে দমনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
সহজে ফরমুলা দেয়া যায়। বাস্তবতা অনেক কঠিন তা অস্বীকার করার কোন জো নেই। কারণ আক্রান্ত পরিবেশে পরিবার ও সমাজকে দ্রত সংক্রমিত করে। এমন আক্রান্ত সমাজে একদল উদ্যমী লোক নিজেদেরকে সম্মুখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানে এক কঠিন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ করা। কিন্তু এর বাস্তব নমুনা আমাদের কাছে রাসুল (সা) এর সময়কাল। তিনি যখন আরবের জাহেলিয়াতপূর্ণ সমাজে এলেন তখন অশ‑ীলতা, মাদকতা ও হিংস্রতার বীভৎস ছড়াছড়ি ছিল। তিনি সেই সমাজকে করলেন সবচেয়ে সম্মানিত। দূরীভূত হল নোংরামি, নারী-পুরুষের অবাধ যৌনাচার। সেখানে যারা সহযোদ্ধা ছিলেন। তারা ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উন্নত চরিত্র সম্পন্ন মানুষ। যারা পৃথিবীর কাছে মাথা নত করেননি বরং পৃথিবী তাদের কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছে। যারা তাদের জীবনকে আল‑াহর সন্তুষ্টির জন্য সঁপে দিয়েছিলেন। আল‑াহর সন্তুষ্টিই ছিল তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। তেমনি আজকের এমন ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থায় আমরা যদি নিরলস ভাবে যার যার অবস্থান থেকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে অশ‑ীলতা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে পারি তাহলে আমাদের প্রত্যাশিত সেই হেরার আলোয় উদ্ভাসিত সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। একটি আল‑াহনির্ভর কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। ইনশাআল‑াহ।
৩০-১০-২০১৪
ঢাকা